স্ত্রীর মান ভাঙাতে না হয় একটু ছলচাতুরি করেছিলেন। তা বলে শেষতক পুলিশের জেরায় ল্যাজে-গোবরে হয়ে এমন কাণ্ড হবে তা কে জানত! আসগর শেখও জানতেন না ব্যাপারটা এমন ঘোরালো হয়ে উঠবে। ভেবেছিলেন মাসখানেকের বিরহ শেষে দেখার পর তাঁর ‘কহানি’ শুনে নিশ্চয়ই মন গলবে স্ত্রীর। উল্টে থানায় বসে শুনতে হল স্ত্রীর মুখ-ঝামটা, “মরণ আমার, অমন স্বামীর সঙ্গে ঘর করার চেয়ে বাপের বাড়িতে মুখ বুজে থাকা ঢের ভাল।” সমশেরগঞ্জের রতনপুরের ভ্যান চালান আসগর। বছর আটেক আগে তাঁর বিয়ে হয়েছিল শেরপুরের জ্যোৎস্না খাতুনের সঙ্গে। বৌ, দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে টানাটানির সংসারে ভ্যান টেনে আর কী এমন আয় হয়। তাই জীবনসঙ্গিনীর কাছেই মাঝেমধ্যে হাত পাততেন আসগর। জানতেন, বিপদে-আপদে লাগবে বলে হেঁশেলের কৌটোয় কিছু টাকা তুলে রাখেন লক্ষ্মীমন্ত বৌ। স্বামীর হাতে সে টাকা দিতে কসুরও করতেন না জ্যোৎস্না। আসগরও দু’পয়সা বাড়তি আয় হলেই ধার করা টাকা বৌকে ফিরিয়ে দিতেন। এই অবধি দিব্যি চলছিল। গোল বাধল মাসখানেক আগে। এক রাতে ঘরে ফিরে গলাটা খাদে নামিয়ে স্ত্রীকে বলেছিলেন আসগর, “বড় বেকায়দায় পড়ে গিয়েছি গো। ভ্যানটাও না সারালে আর চলছে না। হাজার দুয়েক টাকা দরকার। কিন্তু পাব কোথায় বলো দিকি?” |
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য। |
স্বামীকে ভেঙে পড়তে বিয়ের সময়
বাপের বাড়ি থেকে দেওয়া এক ভরি চার আনার সোনার হারটা স্বামীর হাতে তুলে
দিয়েছিলেন জ্যোৎস্না। নিজেই বলেছিলেন, “বাঁধা রেখে এখনকার মতো কাজ চালিয়ে
নাও। পরে ছাড়িয়ে এনো।” হাতে হার, থুড়ি চাঁদ পেয়েছিলেন আসগর মিঞা। কিন্তু তার পর? মাস গড়িয়ে বছর কাটে। আসগর আর ভুলেও সোনার হার নিয়ে উচ্চবাচ্য করেন না। স্বামীর ভাবগতিক দেখে সন্দেহ হয় জোৎস্নার। সকাল-সন্ধে হারের কথা মনে করিয়ে লাভ না হওয়ায় গত মাঘের শুরুতেই গোঁসা করে দুই ছেলেমেয়ের হাত ধরে ঘর ছেড়ে সটান গিয়ে ওঠেন শেরপুরে বাপের বাড়িতে। বৌ তো গেলেন। এ দিকে বাড়িতে একা মন টেকে না আসগরের। হাত পুড়িয়ে রান্না কাঁহাতক ভাল লাগে? ফিরে এসো প্রিয়তমা! শেষমেশ সোমবার রাতে ভ্যান নিয়ে আসগর রওনা দেন শ্বশুরবাড়ির পথে। চাকা ঘুরছে, মনে চলছে ঝড়। টগবগ করছে নিজের লেখা হাজার ভোল্টের চিত্রনাট্য। এ বার হয় এসপার নয় ওসপার। সুতির মধুপুরের কাছে হঠাৎ এক চিল-চিৎকার শুনে ছুটে আসেন গ্রামবাসীরা। দেখেন, ছেঁড়া লুঙ্গি, ফালাফালা হওয়া ফুলশার্ট পরা এক ভ্যানচালক রাস্তায় হাপুস নয়নে কাঁদছেন। কী হয়েছে? আসগর চোখ মুছে বলেন, “শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলাম। হঠাৎ জনা কয়েক লোক আমাকে মারধর করে সব লুঠ করে নিল।” কী নিল গো? আসগর জবাব দেন, “স্ত্রীর সোনার হার ছিল গো। তার হাতে সেই হার তুলে দিতেই যাচ্ছিলাম।” অগত্যা তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সুতি থানায়। রাতটুকু তাঁকে থানাতেই কাটাতে বলে মঙ্গলবার সকাল থেকে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন বড়বাবু। ঘণ্টাখানেকের মাথায় ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলেন আসগর। বলেন, “ঘটনাটাই বানানো স্যার! আমায় মাফ করবেন।’’ এ-ও বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনা যেমন সাজানো গপ্পো, তেমনই বৌয়ের সোনার হারও বন্ধক নয়, একেবারে বেচেই দিয়েছেন তিনি। সে হার ফিরিয়ে দেওয়ার আর ক্ষমতা নেই। বড়বাবু সুব্রত মজুমদার পরে বললেন, “রাতবিরেতে অতবড় হার নিয়ে এক ভ্যানচালক পাড়ি দেবে শ্বশুর বাড়ি? প্রথম থেকেই মনে হচ্ছিল, ছিনতাইয়ের ঘটনাটা বড্ড সাজানো। বার কয়েক জেরা করতেই অসংলগ্ন হয়ে পড়ে লোকটির কথাবার্তা। তার পর কাঁদতে কাঁদতে নিজেই সব স্বীকার করে।” আসগরকে অবশ্য ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। আর শ্বশুরবাড়ি যাওয়া হয়নি। স্ত্রীকে ঘরে ফেরানোর স্বরচিত নাটকে ডাহা ফেল করে ভ্যান নিয়ে তিনি ফিরে গিয়েছেন নিজের আস্তানায়। |
Home
»
»Unlabelled
» হার ছিনতাইয়ের নাটকে ডাহা ফেল আসগর
About Author
The part time Blogger love to blog on various categories like Entertainment, Sports, Politics, Events, Job News, Bengal News, National News, International News. If you want be a part of our Admin Panel, please Contact / Whatsapp: +91 8961363755.
Advertisement
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Post a Comment