শ্রাবণের বৃষ্টির প্রথম ছাঁট ছেলেটির মুখে এসে লেগেছিল।তার মেঘ কালো খোলা চুলের বর্ষনে চায়ের দোকানে চাতালের তলে দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম। পৃথিবীতে নেমে এসেছিল ঘন ঘন বজ্র বিদ্যুৎ সহ অঝোর ধারায় বৃষ্টিপাত। ঠান্ডাতে কেঁপে ওঠা রোগা পাতলা জীর্ণ শরীরের বছর পনেরো একটি ছেলে, সেইদিন চুপিসারে তাকিয়ে দেখছিলো বিদ্যুতের ঝলকানি তে আর বাজ পড়ার শব্দে, মেয়েটির চোখের পলখ ভয়ে বারবার মুদে আসার সেই দৃশ্য।
ছেলেটির সেই দৃষ্টিকাতুর চোখ দেখে অনুভব করেছিলাম বয়ঃসন্ধি কালের হৃৎপিন্ডের গতিবেগের তীব্রতা।
ব্যস্ততম পৃথিবীর সীমানা ছাড়িয়ে স্বপ্নে জড়ানো কোন নির্জন পথ ধরে, কিভাবে তার পায়ের নুপুরের শব্দ অনুসরন করে আবছায়ার এক মায়ার সাথে সে হেঁটে চলেছে।
শরতের আকাশে রাজহাঁসের মতো উড়ে যাওয়া মেঘ দেখে একপ্রাণ শ্বাস নিয়ে আকাশের পানে হাত দুখানি মেলে দিয়ে মেয়েটি বলেছিল, "এক আলোকবর্ষ পরে মেঘবালিকা হয়ে উড়ে যাবো, নীল পড়িদের কোন দেশে / যেই ভাবে উড়ে চলেছে শত কোটি মানুষের ইচ্ছে, শরতের ওই মেঘেদের বেশে / অশ্রু নদীর ধারা হয়ে নেমে আসব ওই ,ধরিত্রী মায়ের বুকে / হয়তো বা..."। তার কবিতা বলা নষ্ট করে দিয়ে, ছেলেটি তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠেছিলো, "তুই আমাকে ছেড়ে কোনদিন যাস না রে। তুই চলে গেলে আমি একা হয়ে যাবো।" উত্তরে মেয়েটি বলেছিল, "তুই এতো অসভ্য কেনো রে"। হো হো করে হেসে ওঠা সেই ডানপিটে ছেলেটির হাসির আওয়াজ আজও আমার কানে বাজে।
রোদ, বৃষ্টির কোন ছলনার মধ্যে মেয়েটি তার আঙুল দিয়ে ছেলেটিকে দেখিয়েছিল রামধনুর রঙ বেরঙের পাখনা মেলার অপরূপ সৌন্দর্যের সেই দৃশ্য। কিশোর বয়সের সাদা, কালো মন, প্রথম বার পেয়েছিল রামধনুর সাতটি রঙে রাঙিয়ে আসার কোন রঙীন স্বাদ। আর সেই ছেলেটি তাকে কথা দিয়েছিল রায়দিঘীর পাড়ে কোন জোৎস্না মাখা রাতে দেখাবে পদ্ম ফুলের উপর ঝরে পরা চাঁদ জোছনার মেলা। আকাশের নক্ষত্রের ক্ষীণ আলো আর পদ্ম পাতার উপর পড়া জলের বিন্দু গুলি একাকার হয়ে ফুটে উঠবে ওই দীঘীর জলে। মনে হবে কোন সোনালী বর্ণের সাপ মেঘেদের গা বেয়ে ভেসে চলেছে সেই দীঘীতে। সেই দৃশ্য ছেলেটা তাকে দেখাতে না পারার দুঃখ আজ ও তার বুকে নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছে।
কতদিন হাসতে হাসতে মেয়েটির চোখের কোন দিয়ে বেরিয়ে আসা জলের বিন্দু ভূমি স্পর্শ করার আগে হাত পেতে ছোঁয়ার চেষ্টা করে ছেলেটি ব্যর্থ হয়েছে। মাটির দিকে তাকিয়ে তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সর্ব হারা কোন ফকিরের মতো হীরে, মুক্ত খোঁজার মতো খুঁজে গিয়েছে সেদিন গুলিতে। ফিরে এসেছে একবুক বিষাদ নিয়ে, আর বাড়িয়ে গেছে তার ব্যর্থতার যন্ত্রণা আর অভিমানের বোঝা। এইভাবেই কেটে গিয়েছে জীবনের অনেকটা সময়, সময়ের মাতাল কোন ঝড়ে খড় কুঠোর মতো উড়ে গিয়েছে একটা যুগ। সময় ভুলিয়ে দিয়েছে তার সাথে কাটানো অনেক স্মৃতিগুলিকে। শুধু ভোলাতে পারে নি হারানো সন্ধিক্ষণ বয়সের প্রেমের সেই ঋতু বৈচিত্র্যের অনুভূতি গুলিকে। মনে মনে এখনও মন ফিরে যেতে যাই সেইসব দিনগুলিতে।
(ব্লগামী বিভাগে লেখা পাঠাতে চান, তাহলে Whatsapp +91 89613363755 এ মেসেজ করে বা আমাদের ফেসবুক পেজে মেসেজ করে বা ই-মেলে raghunathganjtown@gmail এ পাঠাতে পারেন)
Post a Comment