পশ্চিমবঙ্গে বইমেলার সূচনা হয় মুর্শিদাবাদের এক মহকুমা সদর জঙ্গিপুরের রঘুনাথগঞ্জ শহরে ১৯৬৩ সালে - ১৯৭৫ সালে 'কলকাতা পুস্তক মেলা' শুরু হবার ১২ বছর আগে । সেকালে ঐ অঞ্চলের কিছু শিক্ষিত ব্যক্তির সক্রিয় সহযোগিতা এবং এক পুস্তক ব্যবসায়ী স্বাধীনতা সংগ্রামী বরুণ রায়ের ব্যক্তিগত পরিকল্পনা ও প্রয়াসে সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে "জঙ্গিপুর গ্রন্থমেলা" নামাঙ্কিত রাজ্যের ঐ প্রথম বইমেলায় কলকাতার ন্যাশনাল বুক এজেন্সি , চিলড্রেন বুক ট্রাস্ট , বসুমতী সাহিত্য মন্দির ইত্যাদি প্রকাশন সংস্থা তাদের পুস্তক প্রদর্শন ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেছিল ।
১৯৬৩ সালের এপ্রিল মাসে ৭ (সাত) দিনের ঐ বইমেলায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল । রবীন্দ্রদিবস , নাট্যদিবস , সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা দিবস ইত্যাদি নামাঙ্কিত সাতদিনের ঐ বইমেলায় সেকালের বিখ্যাত রবীন্দ্রসাহিত্য বিশেষজ্ঞ উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য , যুগান্তর-সম্পাদক বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় , 'পথের পাঁচালি'- খ্যাত কানু বন্দ্যোপাধ্যায় , কবিয়াল গুমানি দেওয়ান , গম্ভীরা গান খ্যাত 'বাংলার চ্যাপলিন' মটরবাবু প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন ।
জঙ্গিপুরের ঐ বইমেলার মূল কমিটির সভাপতি তদানীন্তন মহকুমাশাসক অমলকৃষ্ণ গুপ্তের তত্বাবধানে জঙ্গিপুর কলেজের তৎকালীন গ্রন্থাগারিক বিশ্বপতি চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক প্রকাশিত একটা স্মারকগ্রন্থে পশ্চিমবঙ্গের বহুবিখ্যাত দাদাঠাকুর শরৎচন্দ্র পণ্ডিত , শহিদ নলিনী বাগচি , বিপ্লবী নলিনীকান্ত সরকার , চলচিত্র নির্মাতা তপন সিংহ , চিত্রকর ক্ষিতীন মজুমদার , কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন অধ্যাপক অনুকুল চন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রমুখ জঙ্গিপুরের বিশিষ্ট ১১ জন গুনিজনের পরিচিতিসহ ঐ মহকুমার এক সর্বাঙ্গীণ ইতিহাস রচনার চেষ্টা হয় ।
ঐ ঐতিহাসিক স্মারকগ্রন্থের সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যে ছিলেন জঙ্গিপুর কলেজের তদানীন্তন অধ্যাপক নাট্যকার মোহিত চট্টোপাধ্যায় । সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যান্যদের মধ্যে ঐ কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আশিস রায় ও রঘুনাথগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হরিলাল দাসের নাম উল্লেখ্য । ১৯৬৩ সালের জঙ্গিপুর গ্রন্থমেলার ৯৯ পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপন বিহীন স্মারকগ্রন্থটি এখনও এলাকার অনেক মানুষের ব্যক্তিগত-সংগ্রহে সুরক্ষিত আছে ।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: আশিস রায়
Post a Comment